নামাজে কি কি কারণে সিজদায়ে সাহু দিতে হয়? ও সিজদায়ে সাহু দেওয়ার সঠিক নিয়ম | কুরআন ও হাদীস

 

namaje-sijda-e-sahu-karon-o-niyom

নামাজে কি কি কারণে সিজদায়ে সাহু দিতে হয়? ও সিজদায়ে সাহু দেওয়ার নিয়ম

(কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঘটনাভিত্তিক আলোচনা)

যোহরের নামাজ। মসজিদের ইমাম সাহেব চার রাকাআতের নামাজ পড়াচ্ছেন। হঠাৎ দেখা গেল, তৃতীয় রাকাআতে বসার জায়গায় না বসেই তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লিদের কেউ “সুবহানাল্লাহ” বললেন। ইমাম বুঝতে পেরে নামাজ শেষ করলেন, তারপর সালামের আগে দুটি অতিরিক্ত সিজদা দিলেন। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগল—এগুলো কেন করা হলো?

এই প্রশ্নের উত্তরই হলো সিজদায়ে সাহু


সিজদায়ে সাহু কী?

নামাজ আদায়ের সময় ভুল, ভুলে যাওয়া বা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হলে নামাজ শুদ্ধ রাখার জন্য যে দুটি সিজদা দেওয়া হয়, তাকে সিজদায়ে সাহু বলা হয়।

রাসুলুল্লাহ ﷺ নিজেও নামাজে ভুল হলে সিজদায়ে সাহু দিয়েছেন—এটি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।


কুরআনের মূলনীতি

যদিও কুরআনে সরাসরি “সিজদায়ে সাহু” শব্দ নেই, তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি রয়েছে—

“আল্লাহ কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না।”
(সূরা আল-বাকারা: ২৮৬)

এই আয়াতের আলোকে বোঝা যায়—ভুল যদি অনিচ্ছাকৃত হয়, তাহলে তার জন্য সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।


সিজদায়ে সাহু দিতে হয় যেসব কারণে

নিম্নে প্রধান কারণগুলো সহজভাবে তুলে ধরা হলো—


১. নামাজের ওয়াজিব কাজ ভুলে ছুটে গেলে

যেমন—

  • প্রথম বৈঠকে (দুই রাকাআতের পর) বসতে ভুলে দাঁড়িয়ে যাওয়া

  • কিরাআতের ক্রমে বড় ভুল করা

  • নীরবে পড়ার জায়গায় জোরে পড়া বা উল্টোটা

➡️ এসব ক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব


২. রাকাআত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে

যেমন—

  • ৩ রাকাআত না ৪ রাকাআত পড়েছেন, নিশ্চিত নন

হাদীসে এসেছে—
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
“যদি কেউ সন্দেহে পড়ে, তবে কম সংখ্যার উপর ভিত্তি করবে এবং সিজদায়ে সাহু করবে।”
(সহীহ মুসলিম – অর্থানুগ)


৩. নামাজে কিছু বাড়তি কাজ হয়ে গেলে

যেমন—

  • ভুল করে অতিরিক্ত রাকাআত পড়ে ফেলা

  • এক রাকাআতে অতিরিক্ত রুকু বা সিজদা

➡️ নামাজ শেষে সিজদায়ে সাহু দিতে হয়


৪. নামাজের কোনো সুন্নত কাজ ভুলে বারবার ত্যাগ হলে

একবার ভুলে গেলে সমস্যা নেই,
কিন্তু বারবার গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত বাদ পড়লে—সিজদায়ে সাহু প্রযোজ্য হয় (হানাফি ফিকহ অনুযায়ী)।


কখন সিজদায়ে সাহু দিতে হয় না?

❌ ফরজ বাদ পড়লে (যেমন—রুকু বা সিজদা পুরোপুরি বাদ গেলে)
➡️ নামাজ ভেঙে যাবে, নতুন করে পড়তে হবে।

❌ ইচ্ছাকৃত ভুল করলে
➡️ সিজদায়ে সাহু যথেষ্ট নয়।


সিজদায়ে সাহু দেওয়ার সঠিক নিয়ম

🟢 প্রচলিত ও সহীহ পদ্ধতি (হানাফি মতে):

  1. নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়বেন

  2. ডান দিকে একবার সালাম ফিরাবেন

  3. এরপর দুটি সিজদা করবেন

    • প্রতিটি সিজদায় “সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা” বলবেন

  4. আবার বসে

    • তাশাহহুদ

    • দরুদ

    • দোয়া পড়বেন

  5. তারপর দুই দিকে সালাম ফিরাবেন


রাসুল ﷺ এর আমল

হাদীসে এসেছে—

রাসুলুল্লাহ ﷺ একবার যোহরের নামাজে ভুল করে দুই রাকাআতের পর সালাম ফিরিয়ে দেন। পরে ভুল বুঝতে পেরে দুইটি সিজদা করেন।
(সহীহ বুখারি ও মুসলিম – অর্থানুগ)

এ থেকেই সিজদায়ে সাহুর বিধান প্রমাণিত।


শিক্ষা ও উপসংহার

সিজদায়ে সাহু আমাদের শেখায়—

  • ইসলাম কঠোর নয়, বরং সহজ ও দয়ালু

  • ভুল হলে হতাশ না হয়ে সুন্নতি পথে সংশোধন করতে হয়

  • নামাজে মনোযোগ বাড়ানোর গুরুত্ব

মসজিদের সেই মুসল্লিরাও বুঝে গেলেন—সিজদায়ে সাহু নামাজকে নষ্ট করে না, বরং নামাজকে পূর্ণতা দেয়

আল্লাহ আমাদের নামাজ শুদ্ধভাবে আদায় করার তাওফিক দিন। আমিন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url