দোয়া কুনুত না পারলে বিতর নামাজ কিভাবে পড়বেন? | সঠিক পদ্ধতি
দোয়া কুনুত না পারলে বিতর নামাজ কিভাবে পড়তে হবে
নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। দিনের শেষ নামাজ হিসেবে বিতর নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এশার নামাজের পর বিতর পড়া ওয়াজিব। কিন্তু অনেক মুসল্লি আছেন যারা দোয়া কুনুত মুখস্থ জানেন না, ফলে তারা বিতর নামাজ পড়তে গিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান।
এই লেখায় আমরা সহজভাবে জানবো—
✔ দোয়া কুনুত কী
✔ বিতর নামাজের নিয়ম
✔ দোয়া কুনুত না পারলে কী করবেন
✔ ভুল হলে নামাজ সহিহ হবে কি না
আশা করি পোস্টটি আপনার জন্য উপকারী হবে।
দোয়া কুনুত কী?
দোয়া কুনুত হলো একটি বিশেষ দোয়া, যা বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাতে রুকুর আগে বা পরে পড়া হয় (হানাফি মাযহাব অনুযায়ী রুকুর আগে)।
এটি মূলত আল্লাহর কাছে সাহায্য, ক্ষমা ও হেদায়েত চাওয়ার একটি দোয়া।
দোয়া কুনুত পড়া ওয়াজিব, তবে কেউ না জানলে তার জন্য ইসলাম সহজ বিকল্প রেখেছে।
বিতর নামাজ কয় রাকাত?
হানাফি মাযহাব অনুযায়ী বিতর নামাজ ৩ রাকাত এবং এটি একসাথে পড়তে হয়।
অন্যান্য নফল নামাজের মতো দুই রাকাত সালাম দিয়ে আলাদা করা যায় না।
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম (সংক্ষেপে)
১. এশার নামাজের পর বিতরের নিয়ত করুন
২. প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাত সাধারণ নামাজের মতো
৩. তৃতীয় রাকাতে—
সূরা ফাতিহা
অন্য একটি সূরা
এরপর অতিরিক্ত তাকবীর
তারপর দোয়া কুনুত
এরপর রুকু ও সিজদা
দোয়া কুনুত না পারলে বিতর নামাজ কিভাবে পড়বেন?
এটাই মূল প্রশ্ন। উত্তর হলো—
দোয়া কুনুত না জানলেও বিতর নামাজ আদায় করা যাবে।
ইসলাম কাউকে কষ্ট দেয় না। নিচে কয়েকটি সহজ ও সহিহ পদ্ধতি দেওয়া হলো।
১. যে কোনো মাসনুন দোয়া পড়তে পারবেন
আপনি যদি দোয়া কুনুত মুখস্থ না জানেন, তাহলে—
“রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া…”
“আল্লাহুম্মাগফিরলি”
“রব্বির হামহুমা কামা রব্বাইয়ানি সাগীরা”
এগুলোর যেকোনো একটি দোয়া পড়তে পারবেন।
২. শুধু “আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা…” জানলেও যথেষ্ট
দোয়া কুনুতের পুরোটা না পারলেও এর কিছু অংশ পড়লে নামাজ হয়ে যাবে।
৩. একাধিকবার “রব্বিগফিরলি” পড়লেও চলবে
যদি কোনো দোয়া একদমই মুখস্থ না থাকে, তাহলে—
“রব্বিগফিরলি, রব্বিগফিরলি”
অথবা “আল্লাহুম্মাগফিরলি”
৩ বার বা তার বেশি পড়তে পারবেন।
৪. নিজের ভাষায় দোয়া করা যাবে (আরবি জানা না থাকলে)
আরবি একদম না জানলে, মনে মনে বা নিচু স্বরে নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করলেও নামাজ সহিহ হবে।
তবে চেষ্টা করবেন ভবিষ্যতে আরবি দোয়া শিখে নিতে।
দোয়া কুনুত ভুলে গেলে কী করবেন?
নামাজে দোয়া কুনুত ভুলে গেলে—
রুকুতে চলে গেলে আর ফিরে আসবেন না
নামাজ শেষ করে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে
এতে নামাজ সহিহ হয়ে যাবে।
দোয়া কুনুত ছাড়া বিতর নামাজ কি সহিহ?
✔ হ্যাঁ, সহিহ হবে
✔ ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া ঠিক নয়
✔ না জানার কারণে বা ভুলে গেলে গুনাহ হবে না
ইসলাম সহজ ও বাস্তবধর্মী।
দোয়া কুনুত শেখা কি জরুরি?
অবশ্যই। যদিও না জানলে বিকল্প আছে, তবুও—
এটি ওয়াজিব
নামাজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর করে
তাই ধীরে ধীরে মুখস্থ করার চেষ্টা করা উচিত।
দোয়া কুনুত সহজভাবে মুখস্থ করার টিপস
প্রতিদিন নামাজের পর ২ লাইন করে মুখস্থ করুন
বাংলা অর্থসহ পড়ুন
মোবাইলে অডিও শুনুন
ফজর বা এশার পর ৫ মিনিট সময় দিন
এক সপ্তাহেই মুখস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
শেষ কথা
দোয়া কুনুত না জানার কারণে বিতর নামাজ বাদ দেওয়া কখনোই ঠিক নয়।
ইসলাম আমাদের জন্য সহজ পথ খুলে দিয়েছে।
আজ যা জানেন না, কাল তা শিখে নেওয়ার নিয়ত রাখুন।
নামাজ কখনো ছাড়বেন না
আল্লাহ চেষ্টা দেখেন, পূর্ণতা নয়
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সহিহভাবে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দোয়া কুনুত না জানলে কি বিতর নামাজ হবে?
✔ হ্যাঁ, দোয়া কুনুত না জানলেও বিতর নামাজ সহিহ হবে। তবে বিকল্প হিসেবে অন্য মাসনুন দোয়া পড়তে হবে।
দোয়া কুনুতের বদলে কী দোয়া পড়া যাবে?
“রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া…”
“আল্লাহুম্মাগফিরলি”
“রব্বিগফিরলি”
এই দোয়াগুলোর যেকোনো একটি পড়া যাবে।
দোয়া কুনুত ভুলে গেলে কী করতে হবে?
যদি রুকুতে চলে যান, তাহলে আর ফিরে আসবেন না। নামাজ শেষে সিজদায়ে সাহু দিলে নামাজ সহিহ হবে।
দোয়া কুনুত ছাড়া বিতর নামাজ পড়লে গুনাহ হবে কি?
না, না জানার কারণে বা ভুলে গেলে কোনো গুনাহ হবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া ঠিক নয়।
দোয়া কুনুত শেখা কি ফরজ?
ফরজ নয়, কিন্তু ওয়াজিব। তাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দোয়া কুনুত শেখার চেষ্টা করা জরুরি।
