মোনাজাত করার নিয়ম: শুরুতে কি পড়বে, মাঝে কি পড়বে এবং শেষে কি পড়বে?
মোনাজাত হলো আল্লাহ তাআলার দরবারে বান্দার বিনয়পূর্ণ আরজি পেশ করার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। নামাজের পরে, তাহাজ্জুদের সময়, রোজার মুহূর্তে, বিপদে-আপদে কিংবা আনন্দের সময়—সব অবস্থাতেই আল্লাহর কাছে মোনাজাত করা যায়।
কিন্তু অনেকেই জানেন না মোনাজাত করার সঠিক নিয়ম কী, কীভাবে শুরু করতে হয়, মাঝখানে কী পড়তে হয় এবং শেষে কী দিয়ে শেষ করা উত্তম।
এই পোস্টে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
মোনাজাত শুরু করার সঠিক নিয়ম।
মোনাজাত শুরু করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আদব রয়েছে।
আল্লাহর প্রশংসা (হামদ ও সানা)
প্রথমে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা উচিত।
উদাহরণ:
আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিজগতের পালনকর্তা।
আল্লাহর প্রশংসা ছাড়া মোনাজাত শুরু করা উত্তম নয়।
নবী ﷺ এর ওপর দরুদ পাঠ
এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওপর দরুদ পাঠ করতে হবে।
দরুদ শরীফ:
আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া ‘আলা আালি মুহাম্মাদ
অর্থ: হে আল্লাহ! মুহাম্মদ ﷺ ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর রহমত নাযিল করুন।
হাদিসে এসেছে, দরুদ ছাড়া দোয়া আকাশ ও জমিনের মাঝে আটকে থাকে।
মোনাজাতের মাঝে কী পড়বে?
এই অংশে বান্দা নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী দোয়া করবে।
✔ ১. গুনাহ মাফের দোয়া
✔ ২. দুনিয়ার প্রয়োজনের দোয়া।
রিজিক বৃদ্ধি, রোগমুক্তি, সন্তান নেককার হওয়া,পড়াশোনায় সফলতা, পরিবারে শান্তি নিয়ে দোয়া করবেন।
নিজের মাতৃভাষায় (বাংলায়) দোয়া করা সম্পূর্ণ জায়েজ।
✔ ৩. আখিরাতের কল্যাণ কামনা
ঈমানের সাথে মৃত্যু,জান্নাত লাভ ,কবর ও জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি।
কুরআনে বর্ণিত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ মোনাজাত
(আরবি | বাংলা উচ্চারণ | অর্থসহ)
১. দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের দোয়া
সূরা বাকারা: ২০১
আরবি:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
বাংলা উচ্চারণ:
রব্বানা আতিনা ফিদ দুনইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়া কিনা আজাবান নার।
অর্থ:
হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
২. গুনাহ মাফের দোয়া (হজরত আদম আ.)
সূরা আ‘রাফ: ২৩
আরবি:
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
বাংলা উচ্চারণ:
রব্বানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।
অর্থ:
হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের উপর জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা ও দয়া না করেন, তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।
৩. হিদায়াতের পর বিচ্যুতি থেকে বাঁচার দোয়া
সূরা আলে ইমরান: ৮
আরবি:
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً
বাংলা উচ্চারণ:
রব্বানা লা তুযিগ কুলুবানা বা‘দা ইয হাদাইতানা ওয়া হাব লানা মিল্লাদুনকা রহমাহ।
অর্থ:
হে আমাদের রব! আপনি আমাদের হিদায়াত দেওয়ার পর আমাদের হৃদয়কে বিচ্যুত করবেন না এবং আমাদের প্রতি আপনার রহমত দান করুন।
৪. জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়া
সূরা ত্ব-হা: ১১৪
আরবি:
رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا
বাংলা উচ্চারণ:
রব্বি যিদনী ‘ইলমা।
অর্থ:
হে আমার রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।
৫. নেক সন্তান লাভের দোয়া
সূরা ফুরকান: ৭৪
আরবি:
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ
বাংলা উচ্চারণ:
রব্বানা হাব লানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ‘ইউন।
অর্থ:
হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে আমাদের চোখের শীতলতা বানিয়ে দিন।
৬. ঈমানের সাথে মৃত্যু কামনার দোয়া
সূরা ইউসুফ: ১০১
আরবি:
تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ
বাংলা উচ্চারণ:
তাওয়াফ্ফানি মুসলিমাঁও ওয়া আলহিকনি বিস্সালিহিন।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং নেককারদের সাথে যুক্ত করুন।
৭. মা–বাবার জন্য দোয়া
সূরা ইসরা: ২৪
আরবি:
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
বাংলা উচ্চারণ:
রব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগীরা।
অর্থ:
হে আমার রব! আমার মা-বাবার প্রতি দয়া করুন, যেমন তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।
৮. ধৈর্য ও দৃঢ়তার দোয়া
সূরা বাকারা: ২৫০
আরবি:
رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا
বাংলা উচ্চারণ:
রব্বানা আফরিগ ‘আলাইনা সাবরাঁও ওয়া সাব্বিত আকদামানা।
অর্থ:
হে আমাদের রব! আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দিন এবং আমাদের পা দৃঢ় করে দিন।
৯. রিজিক ও কল্যাণের দোয়া
সূরা কাসাস: ২৪
আরবি:
رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
বাংলা উচ্চারণ:
রব্বি ইন্নি লিমা আনঝালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির।
অর্থ:
হে আমার রব! আপনি আমার প্রতি যে কল্যাণ নাযিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী।
১০. শিরক থেকে নিরাপত্তার দোয়া
সূরা ইবরাহিম: ৩৫
আরবি:
رَبِّ اجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعْبُدَ الْأَصْنَامَ
বাংলা উচ্চারণ:
রব্বিজনুবনি ওয়া বানিয়্যা আন না‘বুদাল আসনাম।
অর্থ:
হে আমার রব! আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তি পূজা (শিরক) থেকে দূরে রাখুন।
মোনাজাত শেষে কী পড়বে?
পুনরায় দরুদ শরীফ শেষেও দরুদ পাঠ করা সুন্নত।
দরুদ শরীফ:
ওয়া সাল্লাল্লাহ-তায়ালা আলা খাইরি খালক্বিহী মুহাম্মাদিও ওয়া আ-লিহি ওয়াআছহাবিহী আজমায়ীন।
এবং এই টি পড়ে মোনাজাত শেষ করবেন।
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ
وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ
وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
বাংলা উচ্চারণ:
সুবহা-না রাব্বিকা রাব্বিল ‘ইয্যাতি ‘আম্মা ইয়াসিফূন।
ওয়া সালা-মুন ‘আলাল মুরসালীন।
ওয়াল হামদু লিল্লা-হি রাব্বিল ‘আ-লামীন।
অর্থ:
আপনার প্রতিপালক—মহাশক্তির অধিকারী রব—তাঁরা যে সব কথা বলে তা থেকে পবিত্র।
রাসূলগণের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।
এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক।
“আমিন” বলা । সব দোয়ার পর অন্তর থেকে আমিন বলতে হবে। হাত মুখে মুছে নেওয়া।
অনেক সাহাবি ও আলেমের মতে মোনাজাত শেষে হাত মুখে মুছে নেওয়া জায়েজ।
মোনাজাত হলো বান্দার শক্তিশালী অস্ত্র। সঠিক নিয়ম, বিনয়, একাগ্রতা ও বিশ্বাস নিয়ে মোনাজাত করলে আল্লাহ কখনোই ফিরিয়ে দেন না। নিয়মিত কুরআনের দোয়া দিয়ে মোনাজাত করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
Keywords
মোনাজাত করার সঠিক নিয়ম জানুন। শুরুতে কী পড়তে হয়, মাঝে কী দোয়া করতে হয় এবং শেষে কী পড়বে—সাথে কুরআনে বর্ণিত মোনাজাত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ মোনাজাত করার নিয়ম কুরআনের দোয়া ইসলামিক মোনাজাত দোয়া ও ইবাদত নামাজের পর দোয়া ইসলামিক ব্লগ বাংলা hossain islamic tips

0 মন্তব্যসমূহ