শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত | কুরআন ও হাদীসের আলোকে
শবে মেরাজের নামাজের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
(কুরআন ও হাদীসের আলোকে)
ভূমিকা
শবে মেরাজ ইসলামের একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ রাত। এই রাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা এবং সেখান থেকে ঊর্ধ্ব আকাশে আল্লাহ তাআলার বিশেষ নিদর্শনসমূহ অবলোকনের সৌভাগ্য লাভ করেন। এই মহান সফরের মাধ্যমেই মুসলিম উম্মাহর জন্য পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ নির্ধারিত হয়। তাই শবে মেরাজে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম।
তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—শবে মেরাজ উপলক্ষে নির্দিষ্ট কোনো ফরজ বা ওয়াজিব নামাজ কুরআন ও সহিহ হাদীসে নির্ধারিত নেই। তবে এই রাতে নফল নামাজ, দোয়া, জিকির ও ইবাদত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
শবে মেরাজের রাতে নামাজ আদায়ের বিধান
ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী শবে মেরাজে যে নামাজ আদায় করা হয়, তা হলো:
-
নফল নামাজ
-
তাহাজ্জুদ নামাজ
-
সালাতুত তাসবিহ (অনেকে আদায় করেন, তবে এটি শবে মেরাজের সাথে নির্দিষ্ট নয়)
👉 ২ রাকাআত ২ রাকাআত করে ১২ নফল নামাজ আদায় করা উত্তম।
আরো পড়ুন 👉 তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও ফজিলত
শবে মেরাজের নফল নামাজের নিয়ম (সহজভাবে)
নফল নামাজের নিয়ম সাধারণ নফল নামাজের মতোই:
-
কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো
-
নিয়ত করা
-
তাকবীরে তাহরীমা
-
সানা
-
সূরা ফাতিহা পড়া
-
তার পর কুরআনের যেকোনো সূরা পড়া
-
রুকু আদায় করা
-
সিজদা আদায় করা
-
দ্বিতীয় রাকাআত একইভাবে আদায় করা।
-
আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম পেরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করা।
শবে মেরাজের নফল নামাজের নিয়ত
🔹 শবে মেরাজের নামাজের আরবি নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ لَيْلَةِ الْمِعْرَاجِ نَافِلَةً مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ، اللَّهُ أَكْبَرُ
🔹 শবে মেরাজের নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতু আন উসল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকআতাই লাইলাতিল মিরাজি নাফলি , মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতি শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।
🔹 শবে মেরাজের নামাজের নিয়ত বাংলা
আমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য শবে মেরাজের রাতে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম, কিবলামুখী হয়ে। আল্লাহু আকবার।
📌 গুরুত্বপূর্ণ নোট
-
নিয়ত মুখে বলা ফরজ নয়—অন্তরের নিয়তই যথেষ্ট।
-
শবে মেরাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ফরজ বা ওয়াজিব নামাজ নেই।
-
এই নিয়ত নফল নামাজের জন্য ব্যবহার করা যায়।
কুরআনের আলোকে শবে মেরাজ
আল্লাহ তাআলা বলেন:
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا
“পবিত্র তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিকালে সফর করিয়েছেন।”
— সূরা বনি ইসরাঈল: ১
এই আয়াত মেরাজের ঘটনার স্পষ্ট প্রমাণ।
হাদীসের আলোকে নামাজের গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“নামাজ মুমিনের মেরাজ।”
(বায়হাকি – অর্থগতভাবে সহিহ)
অর্থাৎ, নামাজের মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে।
শবে মেরাজে উত্তম আমলসমূহ
-
নফল নামাজ
-
বেশি বেশি দরুদ শরিফ
-
ইস্তেগফার
-
কুরআন তিলাওয়াত
-
ব্যক্তিগত দোয়া
❌ আতশবাজি, অনৈসলামিক অনুষ্ঠান, বা ভিত্তিহীন আমল পরিহার করা উচিত।
আরো পড়ুন👉 সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও ফজিলত | সহজ নিয়ম
প্রশ্ন&উত্তর
❓ শবে মেরাজে কি নির্দিষ্ট নামাজ আছে?
উত্তর: না, কুরআন ও সহিহ হাদীসে নির্দিষ্ট কোনো নামাজের কথা নেই। তবে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম।
❓ শবে মেরাজে কত রাকাআত নামাজ পড়বো?
উত্তর: ২ বা ৪ রাকাআত করে যেকোনো সংখ্যক নফল নামাজ পড়া যায়।
❓ এই রাতে দোয়া কবুল হয় কি?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি ফজিলতপূর্ণ রাত; আন্তরিক দোয়া কবুলের আশা করা যায়।
উপসংহার
শবে মেরাজ আমাদের জন্য নামাজের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। নির্দিষ্ট কোনো নামাজ না থাকলেও, এই রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নফল ইবাদত, দোয়া ও আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করাই হলো প্রকৃত উদ্দেশ্য।
🤲 আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
